“সুলতানার স্বপ্ন”। ১৯০৫ সালে “The Indian Ladies” জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিলো ছোট গল্পটি, ‘Sultana’s Dream’ নামে। ছোট গল্প হলেও এর প্রভাব মোটেই ছোট ছিলো না। এমন এক সময়ে এর আবির্ভাব, যে সময় সারা বিশ্বেই নারীদের অধিকার খুব সীমিত ছিলো। এ গল্পে দেখানো হয় নারীশাসিত এক সমাজের ছবি। বিষয়ের দিক থেকে দুঃসাহসী নির্বাচনই বলা যায় একে! এ কাহিনী যিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন, তিনি বেগম রোকেয়া (৯ ডিসেম্বর, ১৮৮০ – ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২)। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসাবে তাঁকে আমরা এক নামে চিনি।
নারী শিক্ষা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে আমৃত্যু লড়াই করা সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক নিয়ে দশটি তথ্য জেনে নেয়া যাক।
জমিদারকন্যা
বেগম রোকেয়ার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার একজন জমিদার।
ভাইয়ের কাছে শেখা
রক্ষণশীল পরিবার হওয়ায় মেয়েদের পড়াশোনার চল ছিলো না। ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে দুই বোন বাংলা ও ইংরেজি শিখেছিলেন। বড় বোন করিমুন্নেসা ছিলেন একজন কবি।
স্বামী যখন সহযোগী
বেগম রোকেয়ার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন ভাগলপুরবাসী একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি নারী শিক্ষায় উৎসাহ দিতেন।
লেখার রাজ্যে পদার্পণ
১৯০২ সালে নবপ্রভা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বেগম রোকেয়ার প্রথম গল্প। ‘পিপাসা’ ছিলো এর নাম।
কবিতার উপহার
সওগাত পত্রিকার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিলো বেগম রোকেয়ার ‘সওগাত’ কবিতা। পরবর্তীতে তাঁর আরো লেখা এতে প্রকাশিত হয়।
নামেই পরিচয়
বেগম রোকেয়ার মূল নাম ছিলো রোকেয়া খাতুন। বিয়ের পর তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নাম ধারণ করেন। পত্রপত্রিকায় মিসেস আর.এস হোসেন নামে ছাপা হতো তাঁর লেখা।
নারী শিক্ষার অগ্রদূত
১৯০৯ সালে স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর রেখে যাওয়া জমানো টাকায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ভাগলপুরে ছিলো এর অবস্থান।
১৯১১ সালে স্কুলটি কলকাতায় স্থাপিত হয়। মুসলিম পরিবারের মেয়েদের পর্দা নিশ্চিত করার জন্য পর্দাটানা ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা ছিলো।
সামাজিক উদ্যোগ
মুসলিম নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯১৬ সালে তিনি স্থাপন করেন আনজুমান-এ-খাওয়াতিন-এ-ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি। বহু বিধবা নারী অর্থ সাহায্য পেয়েছিলো এ সংগঠন থেকে। এছাড়া, দরিদ্র মেয়েদের শিক্ষা ও বিয়ের ব্যবস্থাও করা হতো।
একবার না পারিলে দেখো শতবার
বেগম রোকেয়ার বারবার আবেদন করার কারণে ১৯১৯ সালে সরকার কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল। এর জন্য কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো তাঁকে।
বাংলায় করি জয়
বেগম রোকেয়ার সময় অভিজাত শ্রেণীর মুসলিমরা উর্দু বেশি ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি বাংলা ভাষার উপরেই গুরুত্ব দিতেন। ১৯২৭ সালের বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সম্মেলনে তিনি এর পক্ষে জোরালো বক্তব্যও রাখেন।