বাসায় ফেরার পথে অনিকের বাবা বাজার থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনলো। ঘরে ঢুকতেই অনিক তাকে প্রশ্ন করলো, “বাবা এসব তুমি পলিথিনের ব্যাগে আনলে কেন? পাটের ব্যাগ পাওনি? আমি তো গতকাল বইয়ে পড়লাম পলিথিনের ব্যাগ পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। স্যার বলেছেন আমাদের পলিথিন ব্যবহার না করে পাটের তৈরী ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত”। ছোট ছেলের পরিবেশ নিয়ে এই উদ্বিগ্নতায় বাবা কিছুটা লজ্জিত হলেন। সত্যি-ই তো এসব পলিথিন ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি করছেন তিনি। তিনি চিন্তা করলেন অনিকের মতন সব শিশুদের অধিকার একটি সুন্দর পরিবেশ, তাই প্রতিজ্ঞা করলেন আর কখনো পলিথিনের ব্যাগ নয়।
কল্পনা করুন উপরের এই ঘটনা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে হচ্ছে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন আমাদের দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমে যেতে কত কম সময় লাগবে!
পলিথিনের বিকল্প পাট
পাট নিয়ে লেখায় পলিথিন নিয়ে এতো কথা কেন বলছি তা ভাবছেন? তাহলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ দেশের যে সকল বিষয় নিয়ে গর্ব করতো, তাদের মধ্যে পাটের অবস্থান ছিল উপরের দিকে। ৯০’র দশক থেকে আমাদের পাটের তৈরী দ্রব্যের বাজারে ভরাডুবি হলো পলিথিনের ব্যাগের আগমনের ফলে। পলিথিনের ব্যাগ দামে সস্তা। বাজার দখল করতে তাই এর বেশী সময় লাগলো না।। পলিথিন পচে না, মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এর ফলে মাটি তার উর্বরাশক্তি হারায়। কোথাও জমে জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। বুড়িগঙ্গায় দেখা গেছে, ৮ ফুট পর্যন্ত শুধুই পলিথিনের আস্তরণ।
সরকারি পদক্ষেপ
পলিথিন দূর করতে সরকার যে কম চেষ্টা করেছে তা কিন্তু নয়।ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্যাকেটিংয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত পণ্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। নতুবা লাইসেন্স বাতিল,এক বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা সহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাটজাত ব্যবহার মোড়ক বিল-২০১০ পাস করা হয়েছিল।কিন্তু এরপরেও কি কমানো গেছে পলিথিনের ব্যবহার? আমাদের চারদিকেই পলিথিনের স্তূপ বলে দেয় সে কথা।
প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন
আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন হয়ে যাই, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই পলিথিন বাজার থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কোন দোকানদার পলিথিনের ব্যাগে পণ্য দিতে যদি চায়,তবে আমরা তা নেবো না। এভাবে পলিথিনের চাহিদা না থাকলে তা আর উৎপাদন করাও হবে না, খুব সহজেই তখন বাজার ছাড়া করা যাবে এই পরিবেশের শত্রুকে। পাটের তৈরী দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই পাটজাত দ্রব্যের তথা পাটের উৎপাদন বাড়বে এবং আমরা ফিরে পাব পাটের সেই হারানো জৌলুস।
পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যবহারের সাথে সাথে আমরা অন্য পাটজাত দ্রব্যগুলো ব্যবহার করে পাটের সোনালি দিন ফেরত আনতে পারি। পাট দিয়ে ব্যাগ, ম্যাট, কলমদানী, পাপোশ ইত্যাদি তৈরী হয়। চলুন পাটের পণ্য ব্যবহার করে আমাদের চারপাশকে করি সুন্দর, দেশকে করি পরিবেশবান্ধব।
সামর্থ্যের মধ্যেই পাটপণ্য
পাটজাত দ্রব্যের দাম বেশী হবে,কেন কিনবো? এর উত্তর হিসেবে প্রথমত ভেবে দেখুন পরিবেশ দূষিত করে এমন পণ্য ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি করে নিজের বিভিন্ন রোগ ডেকে আনতে চান? নাকি চান পরিবেশ সুন্দর থাকুক,আপনিও থাকেন সুস্থ? অবশ্যই দ্বিতীয়টিই আমদের সবার চাওয়া। আর পাটজাত পণ্য অনেক দামী, এটি আমাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অনেক কম দামেই আমরা পাটের তৈরী অসাধারণ সব জিনিস কিনতে পারি।
তাহলে, চলুন আজ থেকে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকেই পলিথিন পরিত্যাগ করি আর ব্যবহার করি পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্য। শুধুমাত্র আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের হারানো পাটের বাজার ফিরিয়ে আনতে এবং গৌরব পুনরুদ্ধার করতে।
This article is made possible by the support of the American People through the United States Agency for International Development (USAID.) The contents of this article are the sole responsibility of the Quizards project and do not necessarily reflect the views of USAID or the United States Government.