[et_pb_section][et_pb_row][et_pb_column type=”4_4″][et_pb_text]
“গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা গঠিত সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার” – যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন তাঁর গেটিসবার্গের ভাষণ দেবার সময় গণতন্ত্র সম্পর্কে এমনটাই বলেছিলেন বলে অনেক পাঠ্যক্রমে লেখা হয়ে থাকে।
কিন্তু ইতিহাস বলে, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। জেনে নেয়া যাক আব্রাহাম লিঙ্কন সেদিন গেটিসবার্গে কী বলেছিলেন, কী বলেননি।
গেটিসবার্গের যুদ্ধ
প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে, আব্রাহাম লিঙ্কন সেদিন গেটিসবার্গে কেন গিয়েছিলেন, কী ঘটেছিলো গেটিসবার্গে?
১৮৬১ সালে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ একসময় পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর দিকের সরকারের প্রতি অনুগত রাজ্যসমূহের সাথে দক্ষিণের বিদ্রোহী রাজ্যসমূহের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষ ও যুদ্ধ হয়। ১৮৬৩ সালের জুলাই মাসে পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যেখানে সরকারের প্রতি অনুগত ইউনিয়ন বাহিনী বিজয় অর্জন করে। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই প্রায় অর্ধলক্ষ সৈনিক নিহত হন। সৈনিকদের সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু স্থানীয় আইন কর্মকর্তা ডেভিড উইলস সেখানে একটি সমাধিস্থল তৈরিতে ব্রতী হন। সে বছরের নভেম্বর মাসে সমাধিস্থলটিতে একটি স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে অতিথি করা হয় তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বক্তাদের একজন এডওয়ার্ড এভেরেটকে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। লিঙ্কন আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন ও সময় মতো সেখানে উপস্থিত হন।
গেটিসবার্গের ভাষণ
অনুষ্ঠানের মূল বক্তা হিসেবে এডওয়ার্ড এভেরেট প্রায় দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষে অর্কেস্ট্রায় বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর মঞ্চে আসেন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন। তিনি দুই মিনিটের কিছু কম সময় কথা বলেন। তাঁর পুরো ভাষণ ছিলো ২৭৫ শব্দের। এ ক্ষুদ্র ভাষণটিই লিঙ্কনের গেটিসবার্গের ভাষণ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। লিঙ্কন সেদিন যা বলেন, এখানে তা বাংলায় তুলে ধরা হলো –
আজ থেকে সাতাশি বছর আগে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই মহাদেশে জন্ম দিয়েছিলেন একটি নতুন জাতির, স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন দেশের, যে দেশে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে এবং মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না।
আজ এ ঐতিহাসিক গৃহযুদ্ধ সেই জাতির, কিংবা যেকোন নিবেদিতপ্রাণ জাতির, সহনশীলতার জন্য একটি পরীক্ষা। আমরা আজ সেই যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত। আজ আমরা আমাদের সেই যুদ্ধের ময়দানের একটি অংশ সেই মানুষদের চিরনিদ্রার স্থান হিসেবে উৎসর্গ করতে এসেছি যারা সেই জাতিকে রক্ষায় জীবন দিয়েছেন। আমাদের এটি করতেই হবে।
কিন্তু, বিশদভাবে চিন্তা করলে, এই স্থানটিকে উৎসর্গ কিংবা পবিত্র করার অধিকার বা এখতিয়ার কোনটিই আমাদের নেই। যে সাহসী যোদ্ধারা, যারা মারা গেছেন কিংবা যারা বেঁচে আছেন, এখানে লড়াই করেছেন, তাঁরাই এই স্থানটিকে পবিত্র করেছেন, আমাদের এই তুচ্ছ ক্ষমতা তাঁদের অবদানের কাছে কিছুই না। আমরা এখানে কী বলছি তার খুব সামান্যই মানুষ মনে রাখবে, বরং মানুষ মনে রাখবে তাঁরা এখানে যেই কীর্তিগাথা রচনা করে গেছেন। বরং, আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের নিজেদেরকে উৎসর্গ করা উচিত, তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে যার জন্য তাঁরা যুদ্ধ করেছেন। বরং, আমাদের নিজেদের উৎসর্গ করা উচিত সেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য – এই শহীদদের থেকে তাঁদের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি নিষ্ঠার শিক্ষা নিয়ে – আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এই শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায় – এই জাতির হাত ধরে, ইশ্বরের কৃপায়, স্বাধীনতার নবজন্ম হবে – এবং নিশ্চিত করতে হবে, যে সরকার, জনগণের, জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের জন্য, তা যেন পৃথিবীর মাটি থেকে হারিয়ে না যায়।
মাত্র দুই মিনিটের কম সময়ের এ বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মূল বক্তার বক্তব্যকেও ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকে ছাড়িয়ে যায়। খোদ এডওয়ার্ড এভেরেট লিঙ্কনকে একটি চিঠিতে বলেন, “আমি নিজেকে প্রবোধ দিতে চাই যে, দুই ঘণ্টায় আমি যে বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলাম, তা বোঝাতে আপনি সময় নিয়েছেন দুই মিনিট।”
তাহলে?
পুরো বক্তৃতা পড়লে প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি আব্রাহাম লিঙ্কনের গণতন্ত্র নিয়ে সেদিন কিছুই বলেননি? তাহলে আমরা এতদিন যা শিখে আসলাম তা কি ভুল?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, আব্রাহাম লিঙ্কন সেদিন গণতন্ত্র নিয়ে কিছুই বলেননি। সেদিন তিনি যেখানে গিয়েছিলেন, বা যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন তার সাথে গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়নের সম্পর্ক নেই বললেই চলে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, না, এতদিন যা শিখে এসেছি তা পুরোপুরি ভুল না। আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়নে এমন একটি কথা বলেছিলেন। তবে তা ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গে নয়, ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে।
গেটিসবার্গের দুই বছর আগে, গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ৪ জুলাই আব্রাহাম লিঙ্কন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উদ্দেশ্য একটি বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন, “And this issue embraces more than the fate of these United States. It presents to the whole family of man, the question, whether a constitutional republic, or a democracy — a government of the people, by the same people—can, or cannot, maintain its territorial integrity, against its own domestic foes.”
যার অর্থ দাঁড়ায়, “এবং এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রশ্ন যা একজন মানুষের পুরো পরিবারের সামনে দাঁড়ায় যে, এ সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র বা একটি গণতন্ত্র — একটি সরকার, যা জনগণের, এবং সে একই জনগণের দ্বারা গঠিত — তার স্থানীয় শত্রুদের থেকে আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারবে, নাকি পারবে না।”
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]