পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আরিমা নাসরিনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো মাত্র সতেরো বছর বয়সেই। তাঁর পরিবার চেয়েছিলো বিয়ের পর গৃহিণী হিসেবে নিজের স্বামীর কাজে সাহায্য করবেন।
কিন্তু তিনি সেখানে থেমে থাকতে চাননি। পরিবারকে সাহায্য করতে, যুক্তরাজ্যের ওয়ালস্যাল ম্যানর হসপিটালে ২০০৩ সালে হাউসকিপার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এ নারী। তাঁর বয়স তখন ছিল মাত্র ১৯ বছর। উচ্ছল কিশোরী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি।
তিনি চেয়েছিলেন মানুষের সেবা করতে, নার্স হিসেবে। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও তাই পড়াশোনা বন্ধ করেননি। চেষ্টা করে গেছেন, নিজ উদ্যোগে।
তাঁর পনেরো বছরের চেষ্টার ফল মেলে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে, যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে একজন নার্স হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। নিজের টুইটারে সেই দিনের স্মৃতিচারণা করেছিলেন।
পরে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ওয়ালস্যাল ম্যানর হাসপাতালের একিউট মেডিকাল ইউনিটে কাজ শুরু করেন নার্স হিসেবে, ৩৫ বছর বয়সে। তাঁর ষোল বছরের সেবা দেয়ার অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয় নতুন পালক।
২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে করোনাভাইরাস রোগীর খোঁজ আসতে থাকে তখনও কাজ চালিয়ে গেছেন তিনি। নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন মানুষের সেবায়, তাই মানুষের দুঃসময়ে নিজেকে দূরে রাখতে চাননি, নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
সপ্তাহ খানেক আগে তাঁর করোনাভাইরাস ধরা পড়লে তাঁকে হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয়। অসুস্থ অবস্থায় নিজের তিন সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ১৭ বছর ধরে যে হাসপাতালে হাজারো মানুষকে সেবা দিয়ে গেছেন, সে হাসপাতালেই গত শুক্রবার (৩ এপ্রিল, ২০২০) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর একটা কথাই শুধু তাঁর সহকর্মীদের কানে ভাসছে, “I just wanted to be able to look after people.”
“আমি শুধু মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলাম।”