ধরা যাক, সময়টা ২০১০। স্কুলের ছাত্র আপনি। ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে ডুবে গেছে ঢাকার রাস্তা। মা বললেন আজকে স্কুলে যেতে হবে না। এই হঠাৎ পাওয়া ছুটি উপভোগ করতে বসে গেলেন কম্পিউটারের সামনে, শুরু হয়ে গেল GTA Vice City Bangla খেলা। আমাদের অনেকেরই ছোটবেলার সাথে মিশে আছে জিটিএ গেম খেলার স্মৃতি। জনপ্রিয় এই গেম সিরিজ নিয়ে এই লেখার অবতারণা। চলুন জেনে আসি জিটিএ গেম সিরিজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং আগামীতে কেমন হতে পারে এই গেমটির ধরণ। লেখাটির শেষ অংশে আছে একটি কুইজও। আপনি কতটা মনোযোগ দিয়ে এই লেখা পড়েছেন তারও একটা ঝালাই হয়ে যাবে কুইজ থেকে।
যেভাবে শুরু
১৯৯৪ সালে যখন গেম ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ডিএমএ ডিজাইন, রেস অ্যান্ড চেজ (Race and Chase) নামে একটি গাড়ির রেসিং গেম নিয়ে কাজ করছিল তখন তারা চাচ্ছিল গেমটিকে উত্তেজনাপূর্ণ করতে মাঝে মাঝে পুলিশের টহল দল রাখবে যারা গাড়ির রেসে ব্যাঘাত ঘটাবে। কিন্তু গেমটিতে বাগের কারণে পুলিশ কর্মকর্তারা এতই আক্রমণাত্মক হয়ে পড়তো যে তারা রেসই বন্ধ করে দিত।
তখন গেম ডেভেলপাররা চিন্তা করে এই বাগটিকে ফিচারে পরিণত করার এবং এই চিন্তা থেকেই গ্র্যান্ড থেফট অটো (Grand Theft Auto) বা জিটিএ গেমের শুরু যেখানে একজন প্লেয়ার অপরাধীর ভূমিকায় খেলবে যার কাজ হবে গাড়ি চুরি করে পালানো। গেমটির নাম থেকেই এই বিষয়টা অনুমান করা যায় অবশ্য।
জিটিএ সিরিজের দ্বিতীয় সংস্করণ গ্র্যান্ড থেফট অটো ২ বাজারে আসে ১৯৯৯ সালে। আগের সংস্করণের মত এটিও ছিল টপ-ডাউন ভিউতে খেলার মত করে তৈরি, তবে গ্রাফিক্স এবং খেলার ধরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে। গেমটিতে আগের মত লিনিয়ার বা একমুখী মিশন ছিল না, বরং পাশাপাশি সাইড মিশন খেলা যেত। এই সংস্করণে প্রথমবারের মত ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে টাকা উপার্জনের ফিচার যুক্ত করা হয়।
থ্রিডিতে রূপান্তর, বাড়লো অনেক ফিচার
এই সিরিজের গেমগুলোর মধ্যে জিটিএ ৩ গেমে প্রথমবারের মত 3D বা ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়। এটি ছিল প্রথম দিকের 3D গেমগুলোর একটি। গ্রাফিক্সের এই পরিবর্তন গেমটি খেলার মজা আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও গেমটিতে ছিল অনেক Cheat Codes যা ব্যবহার করে গাড়ি উড়ানো থেকে শুরু করে ট্যাংকও স্পন করা যেত। যদিও গেমটি গেমারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়, গেমটিতে দেখানো নগ্নতা, সহিংসতা ও রক্তারক্তিকে অনেকে ভালো চোখে দেখেনি। গেমটি বাজারে আসে ২০০১ সালে।
জিটিএ সিরিজের জনপ্রিয় গেম জিটিএ: ভাইস সিটি বাজারে আসে ২০০২ সালে। ভাইস সিটি নামে একটি কাল্পনিক শহরে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির আদলে তৈরি, গেমটি খেলা হতো। এখানে মূল চরিত্র কথা বলতে পারতো, বাইক ব্যবহার করতে পারতো, ব্যবসা করে টাকা আয় ও জমাতে পারতো। বাংলাদেশে এই গেমটি ছোটবেলায় খেলেননি এমন গেমার খুব কমই আছেন।
জিটিএ সিরিজের পরের গেম, ২০০৪ সালে বাজারে আসা জিটিএ: স্যান আন্দ্রেয়াস এই সিরিজের সবচেয়ে বড় পরিসরের গেমগুলোর একটি। গেমটির গল্প ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাল্পনিক অঙ্গরাজ্য সান আন্দ্রেয়াসের তিনটি শহরকে কেন্দ্র করে- স্যান ফ্রানসিসকোর আদলে তৈরি স্যান ফিয়েরো, লস অ্যাঞ্জেলসের আদলে লস সান্তোস ও লাস ভেগাসের আদলে লাস ভেনচুরাস- যেগুলো ধীরে ধীরে আনলক হয় গেমের গল্পের সাথে। গেমটিতে ছিল ২১২ ধরণের যানবাহন ব্যবহারের সুযোগ। এছাড়া ছিল সাঁতার কাটা, জিমে গিয়ে ব্যয়াম করা, ফাস্টফুড খাওয়া, বক্সিং করা, গাড়ি মডিফাই করা, নিজের গ্যাং বানানো ও প্রতিপক্ষ গ্যাং-এর সদস্যদের সাথে মারামারি করার ফিচার। এই গেমটি প্লেস্টেশন ২-তে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গেম।
জনপ্রিয়তার শিখরে
২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া জিটিএ ৪ দিয়ে হাইডেফিনিশন (HD) যুগে প্রবেশ করে সিরিজটি। এই গেমটি তৈরি করা হয়েছিল লিবার্টি সিটিকে কেন্দ্র করে, যা নিউ ইয়র্কের আদলে তৈরি। জিটিএ’র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রকস্টার এই গেম তৈরির জন্য নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন অংশের এক লক্ষাধিক ছবি তোলে। গেমটির অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার অপশন ব্যবহার করে বন্ধু বা পরিচিতদের সাথে খেলা যেত। এই সংস্করণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল ব্র্যাঞ্চিং স্টোরি অর্থাৎ প্লেয়ারের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে স্টোরি আগাবে।
বিশ্বের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় গেম হচ্ছে জিটিএ ৫। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গেমের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই গেমটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। গেমটি মুক্তি পাওয়ার প্রথম তিন দিনেই ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করে। গেমটির গল্প স্যান আন্দ্রেয়াসের লস সান্তোস শহরকে ঘিরে। এই গেমটিতে প্রথম একাধিক চরিত্র নিয়ে, নিজে (First Person) কিংবা অন্য কারো অবস্থান (Third Person Perspective) থেকে খেলত পারেন। গেমটিতে ছিল ৩৪৮টি যানবাহন। এখন পর্যন্ত গেমটির ১৯০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
কেমন হবে পরের জিটিএ?
নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রচলনের সাথে সাথে সব সিরিজের গেমেই যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন ফিচার। স্বাভাবিকভাবেই জিটিএ’র পরের সংস্করণেও যে অনেক নতুন কিছু দেখা যাবে তা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া জিটিএ ৬ গেমের ট্রেলার দেখলে ধারণা পাওয়া যায় গেমটি খেলা হবে ভাইস সিটিতে তবে গেমটির পরিসর হবে আগের গেমগুলোর তুলনায় অনেক বড়। এছাড়া প্রায় ৭০% স্থাপনায় প্রবেশ করা যাবে গেমটি খেলার সময়। ধারণা করা হচ্ছে গেমটিতে প্রধান চরিত্র (Playable character) থাকবে দুইটি- একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে। তবে পাশাপাশি অপ্রধান চরিত্র (Non-playable character) থাকবে অসংখ্য এবং আচরণেও থাকবে অনেক ভিন্নতা, তাই ধারণা করা হচ্ছে এটি এই গেমের একটা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হবে। আরও ধারণা করা যাচ্ছে গেমটির গ্রাফিক্সে রে ট্রেসিং (Ray Tracing) থাকবে তাই গ্রাফিক্স হবে খুবই উচ্চমানের এবং এটি খেলতেও বেশ আধুনিক ও সুসজ্জিত ডিভাইসের প্রয়োজন হবে। গেমটি ২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা তবে কম্পিউটার গেমারদের হয়তো ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
-
Question of
জিটিএ ৫ কোন শহরে খেলা হয়?
-
লস সান্তোস
-
লস আলামাস
-
স্যান ফিয়েরো
-
-
Question of
কোন গেমটিতে একাধিক চরিত্র নিয়ে খেলার সুযোগ আছে?
-
জিটিএ ৫
-
জিটিএ ৪
-
স্যান আন্দ্রেয়াস
-
-
Question of
এখন পর্যন্ত বাজারে আসা সবচেয়ে বড় পরিসরের গেম কোনটি?
-
স্যান আন্দ্রেয়াস
-
জিটিএ ৪
-
জিটিএ ৩
-
-
Question of
প্রথম সাঁতার কাটার স্ক্রিপ্ট কোন গেমে ছিল?
-
স্যান আন্দ্রেয়াস
-
জিটিএ ৪
-
ভাইস সিটি
-
-
Question of
জিটিএ: ভাইস সিটি কোন শহরের আদলে বানানো?
-
লস অ্যাঞ্জেলস
-
মিয়ামি
-
নিউ ইয়র্ক
-
-
Question of
বিভিন্ন পেশার কাজ করা যেতো সর্বপ্রথম কোন গেমে?
-
জিটিএ ২
-
জিটিএ ৩
-
ভাইস সিটি
-
-
Question of
জিটিএ ৩ গেমের মূল চরিত্রের নাম কি?
-
ক্লদ
-
টমি ভারসেত্তি
-
ট্রেভর
-
-
Question of
গ্রান্ড থেফট অটো গেমের পূর্বের নাম কী ভাবা হয়েছিল?
-
রেস অ্যান্ড চেজ
-
চেজ দি থিফ
-
রোড রাশ
-
-
Question of
গেমটির ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির আগের নাম কী?
-
ডিএমএ ডিজাইন
-
রকস্টার নর্থ
-
ডিএনসি কর্প
-
-
Question of
কোন সংস্করণে জিটিএ ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স বা থ্রিডি যুগে প্রবেশ করে?
-
জিটিএ ৩
-
স্যান আন্দ্রেয়াস
-
ভাইস সিটি
-