কেমন লাগবে আপনার যদি কোন পাকিস্তানি নাগরিক এসে বাংলাদেশের কালরাত্রি ২৫শে মার্চের গণহত্যাকে “ননসেন্স” বা বাজে কথা বলে উড়িয়ে দেয়?
ফিলিস্তিনিদের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে নাকবা, যেমনটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি। প্ল্যান দালেত নামক এক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস চালায় জায়নবাদীদের একটি দল। মারা যায় অনেক ফিলিস্তিনি, বাস্তুচ্যুত হয় সাত লক্ষাধিক মানুষ।
ইসরায়েলি জায়নবাদীদের একটি সংগঠন ইম তিরতজু দাবি করে নাকবা হচ্ছে একটা বাজে কথা। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের “নাকবা স্মরণ অনুষ্ঠান” আয়োজনের বিপরীতে ২০১৩ সাল থেকেই তারা চালিয়ে আসছে নাকবা? ননসেন্স নামে একটি প্রচারণা যার মূল কথা হচ্ছে নাকবার যে ইতিহাস ফিলিস্তিনিরা প্রচার করে তা পুরোপুরি সত্য না।
২০১৫ সালে এই জায়নবাদী সংগঠনকে অর্থ সহায়তা করেছিল দি সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানি বা সিবিসি ইসরায়েল হচ্ছে ইসরায়েলে কোকা-কোলার প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান। সে বছর ৫০ হাজার শেকেল বা প্রায় ১৪ হাজার ডলার সাহায্য দেয় সংস্থাটি।
শুধু তাই নয়, সহায়তা দেয়ার পর তা যেন ইসরায়েল সরকার নথিভুক্ত না করে তারও আবেদন জানায় সংস্থাটি, অর্থাৎ তারা বিষয়টিকে গোপন রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু যথাযথ কারণ দেখাতে না পারায় আবেদনটি গ্রহণ করেনি তৎকালীন সরকার। তাই এই গোমর ফাঁস হয়ে যায় সে বছর।
কিন্তু প্রশ্ন থাকে, এই সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানির সহায়তার দায় কি কোকা-কোলার উপর আদৌ বর্তায়?
এই প্রশ্নের উত্তর কোকা-কোলা নিজেই দিচ্ছে। দি কোকা-কোলা সিস্টেম নামে যে সাপ্লাই চেইন মডেলের উপর ভিত্তি করে কোকা-কোলা ব্যবসা চালিয়ে আসছে তার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তাদের বোটলিং পার্টনাররা। এই বোটলিং পার্টনারদের মাধ্যমেই কোকা-কোলা পৌঁছে যায় বিভিন্ন দেশে। কোকা-কোলা তাদের মডেলে বোটলিং পার্টনারদের অবদানের কথা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে। তাই সিবিসি ইসরায়েল যখন জায়নবাদীদের অনুদান দেয়, তার দায় কোকা-কোলাও এড়াতে পারে না।
এছাড়াও ইসরায়েলে কোকা-কোলার যে কারখানা সেটিও ফিলিস্তিনিদের জমিতে অবৈধ দখলদারীর মাধ্যমে তৈরি। এমনকি ইসরায়েলের দখলকৃত জমিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানোর দায়ে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ থেকে কোকা-কোলাকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দিয়ে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
এসব কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এরই প্রেক্ষিতে বয়কট বা বর্জনের ডাক উঠছে কোকা-কোলার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তুর্কি সংসদে কোকা-কোলা পরিবেশনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।