সম্প্রতি হয়ে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল অনুসারে জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, বা জো বাইডেনই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি। কেমন হতে পারে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি, তা নিয়েই এই লেখা।
‘ক্লেপ্টোক্র্যাটদের’ জন্য অশনি সংকেত
ল্যাটিন ক্লেপ্টো (klepto) শব্দের অর্থ হচ্ছে আমি চুরি করি। ক্লেপ্টো থেকেই এসেছে ক্লেপ্টোক্র্যাট, অর্থাৎ এমন একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে সরকারের দায়িত্বে থাকা মানুষেরা সরকারি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করে এবং বাইরে পাচার করে দেয়।
জো বাইডেন তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন দেশে ‘ক্লেপ্টোক্র্যাটদের’ উত্থান ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। যার অংশ হিসেবে তিনি একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিরেক্টিভ ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন যেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধকে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে দেখা হবে এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসা, অবৈধ ট্যাক্স হ্যাভেনগুলোর (যেই দেশ বা অঞ্চলে কোন কর দেয়া লাগে না, অথবা করের পরিসর খুব সীমিত) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং দুর্নীতিপরায়ণ দেশগুলোর নেতাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মধ্যবিত্তের পররাষ্ট্রনীতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বিশ্বব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় যে কোল্ড ওয়ারে লিপ্ত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অন্যতম ছিল আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত এবং উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা। চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রতিযোগিতাকেও জো বাইডেন তেমন একটি রূপ দিতে চান যেখানে রপ্তানি চুক্তি বাতিল না করে বরং উদ্ভাবনের অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের সব ধরণের সহায়তা দেয়া হবে যা তাঁর মতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তদের বিকাশের একটি চাবিকাঠি।
“আজীবনের যুদ্ধ” বন্ধ ও সেনাদের ফিরিয়ে আনা
আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধকে জো বাইডেন চিহ্নিত করেছেন Forever Wars বা আজীবনের যুদ্ধ হিসেবে এবং এই যুদ্ধগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে আল-কায়েদা এবং আইএসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে দ্রুততম সময়ে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধরত সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনা।
ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার
সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে তার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে “মানুষের তৈরি নিকৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির একটা বড় অংশ যায় সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে। যে কারণে ২০১৬ সালে যখন সৌদি আরবের নেতৃত্বে হামলায় ইয়েমেনে সাধারণ মানুষ মারা যেতে থাকে, ওবামা প্রশাসন ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে কিছু অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে। কিন্তু ২০১৭ সালে ক্ষমতায় এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সাথে ১১৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আধুনিক অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেন এবং ইয়েমেন যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে মদদ দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন।
জো বাইডেন ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের ব্যাপারে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন
২০১৫ সালে ফ্র্যান্সের রাজধানী প্যারিসে বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ বরাদ্দের যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা থেকে সরে এসেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। জো বাইডেন আশ্বস্ত করেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেলে সেই প্রতিজ্ঞাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবেন।
ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা ইরান ওবামা প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি দেশের সাথে একটি চুক্তি করে যার অধীনে ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং তার পরিবর্তে ইরান তাঁদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচীর লাগাম টেনে ধরতে রাজি হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন পরে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলে হুমকির মুখে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ এবং ইরান পুনরায় তাঁদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী চালু করার ঘোষণা দেয়। জো বাইডেন জানাচ্ছেন, ক্ষমতায় গিয়ে তিনি ইরানের সাথে চুক্তি পুনর্বহাল করবেন।