আপনাকে যদি বলা হয় যে আপনি একটু গরমের দিনে একটু স্বস্তির জন্য টাকা দিয়ে যে কোল্ড ড্রিংকসটা কিনছেন, সেই টাকাটা একজন নিরপরাধ ফিলিস্তিনির উপর বোমা মারতে ব্যবহার করা হচ্ছে- তাহলে আপনি কি সেই কোল্ড ড্রিংকসটা কিনবেন? হয়তো না।
তবে আপনার এই প্রশ্নটা করা দরকার যে আপনার টাকাটা ইসরায়েলে কীভাবে যাচ্ছে? আদৌ কি এমন হয়? নাকি পুরো ব্যাপারটাই হুজুগে?
এই বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত জানা যাক।
বিডিএস মুভমেন্ট
এ প্রসঙ্গেই আমাদের প্রথমে জানা দরকার বিডিএস মুভমেন্টের (BDS Movement) কথা। এখানে বিডিএস (BDS) হচ্ছে Boycott (বর্জন), Divestment (বিনিয়োগ প্রত্যাহার), Sanction (নিষেধাজ্ঞা)। এটি একটি বৈশ্বিক প্রচারণা আন্দোলনে যাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে একটা অর্থনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
মূলত ইসরায়েলি কিংবা ইসরায়েলের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এরকম প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বর্জন করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য। এই আন্দোলন শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় এবং ২০০৫ সালে যখন ফিলিস্তিনের নাগরিক সমাজ পুরো ফিলিস্তিন জুড়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গঠন করে তখন থেকে এটা বিশ্বব্যাপী পরিচিত হতে থাকে। সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে আমরা আবার এই আন্দোলনের বিশ্বব্যাপী জাগরণ দেখতে পাই বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গুলোতে, যার মধ্যে বাংলাদেশের জনসাধারণও ব্যতিক্রম নয়।
এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, বাংলাদেশের সাথে তো ইসরায়েলের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাহলে বাংলাদেশের টাকা কিভাবে ইসরায়েলে পৌঁছায়?
প্রত্যক্ষভাবে সম্ভব না হলেও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের অর্থ ইসরায়েলে পৌঁছানো সম্ভব।
যেমন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পেপসিকো ঘোষণা দেয় যে তাদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ও ইসরায়েলে আহত স্থানীয় নাগরিকদেরকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়া হবে। এখানে পেপসিকোর আপাত নিরপেক্ষ অবস্থান অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। দেয়া হয় বর্জনের ডাক। এখন এই পেপসিকোর টাকা যে ইসরায়েলেও যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের কোন পেপসির ক্রেতার টাকাও থাকতে পারে। কীভাবে, সেটা আলোচনা করা যাক।
বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বাংলাদেশে পেপসিকোর বিভিন্ন পণ্যের স্থানীয় পরিবেশক হিসেবে কাজ করে। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজ পেপসি, সেভেনআপ, মাউন্টেন ডিউ ইত্যাদি সরবরাহ করে। আবার তাদের ট্রান্সকম ফুডস হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন কেএফসি এবং পিৎজা হাটের ফ্রাঞ্চাইজি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। এই দুই ফাস্টফুড চেইন হচ্ছে ইয়াম! ব্র্যান্ডসের অংশ। ইয়াম! ব্র্যান্ডস এবং পেপসিকোর শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা দেখলে দেখা যায় এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের মূল বিনিয়োগকারীরা একই গোষ্ঠীর অংশ। শুধু তাই নয়, কেএসফি এবং পিৎজা হাটে পেপসিকোর কোল্ড ড্রিংকসের বাইরে অন্য কোন কোল্ড ড্রিংকস সরবরাহ করা হয় না।
স্থানীয় পরিবেশক হিসেবে ট্রান্সকমকে পেপসিকোর ব্র্যান্ডের পণ্য সরবরাহ করতে পেপসিকোকে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এই অর্থ কীভাবে আসে? আমরা যে পণ্য কিনি তাদের, সেখান থেকে।
এখন যদি আমরা জনসংখ্যার কথা চিন্তা করি, বাংলাদেশকে পেপসিকোর জন্য একটি বড় বাজার তাই বিডিএস মুভমেন্ট বাংলাদেশে কার্যকর করা গেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা হলেও চাপ অনুভব করবে এবং বিডিএস এর যে লক্ষ্য সেটি অর্জন করতে সক্ষম হবে, এমন একটি ধারণা জনগণের মাঝে আছে।
বয়কট বা পণ্য বর্জন কি কার্যকর হয়?
অনেককে আমরা বলতে শুনি যে আসলে এসব বয়কট খুব একটা কার্যকর না কেননা সবাই এসব পণ্য বয়কট করবে না এবং তাদের মাধম্যে কোম্পানিগুলা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। এ ব্যাপারটার সত্যতা জানা দরকার।
- বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন কফিচেইন “স্টারবাকস” এর কর্মচারীরা “Solidarity with Palestine” টুইট করে কর্মচারীদের অবস্থান সম্পর্কে জানানোয় স্টারবাকস তাদের কর্মচারীদের সংগঠনটির উপর ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের দাবীতে মামলা করে। যে কারণে স্টারবাকসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের অবস্থান বিশ্বের কাছে প্রকাশ পায়। এই কারণে বিশ্বব্যাপী স্টারবাকস বয়কটের স্বীকার হচ্ছে। মালেশিয়াতে ৩ সপ্তাহের বয়কটে ক্রেতা সংকটের কারণে দেশব্যাপী স্টারবাকস আউটলেট পরিচালনার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে যার কারণে কোম্পানিটি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমন বয়কট চলতে থাকলে মালেয়শিয়াতে সম্পূর্ণভাবে স্টারবাকস তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
- একই পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাকডোনাল্ডস বয়কটের আহ্বান করা হয় যখন ম্যাকডোনাল্ডস ইসরায়েল ঘোষণা দেয় তারা বিনামূল্যে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সকে খাদ্য প্রদান করবে। আরব দেশগুলায় (যেমন মিশর, লেবানন, জর্ডান) ম্যাকডোনাল্ডসকে বয়কট করা হতে থাকলে তাদের শেয়ার ভ্যালু হঠাৎ করে পড়ে যায়। এরপর ম্যাকডোনাল্ডসের অন্য কান্ট্রি বেইজড শাখাগুলা গ্রাহকদেরকে বলে যে ম্যাকডোনাল্ডস ইসরায়েলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ম্যাকডোনাল্ডস ওমান এরপর গাযায় ১০০ মিলিয়ন ইউএসডি ডোনেট করার অঙ্গীকার করে। তবে শুরুতে একটু সাফল্য দেখা গেলেও ম্যাকডোনাল্ডস তাদের শেয়ার ভ্যালু আবার আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে মুদ্রার উল্টাদিকও কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি। ইসরায়েলের সাথে কোকাকোলা কোম্পানির সুসম্পর্কের কথা সবার জানা। কোকাকোলা কোম্পানি টারা নামের একটা ডেইরি ফার্ম চালায় যেটি পশ্চিম তীরের ইসরায়েলের দখল করা জমিতে তৈরি। এছাড়া প্রচলিত আছে যে প্রতি বছর তারা ইসরায়েলপন্থী লবিস্ট ফার্মদের অর্থ দেয়, তাই কোকাকোলা বিডিএস মুভমেন্টের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। যার ফলে আমরা সম্প্রতি #NotInMyFridge ক্যাম্পেইন দেখতে পেয়েছি এবং তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের কোকাকোলাকে বয়কট করার ডাক আসে। কিন্তু এর কয়দিন পরই আমরা কোক স্টুডিওর কনসার্টের টিকেট অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয় এবং কনসার্টে ব্যাপক জনসমাগম হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিডিএস মুভমেন্টের প্রভাব আর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
দার্শনিক ও ভাষাবিদ নোম চমস্কি, যিনি কিনা ইসরায়েলের অন্যতম একজন সমালোচক, তিনিও বিডিএস মুভমেন্ট কখনো কার্যকর হবে না বলে মনে করেন। কারণ তার মতে, বিডিএস যতোই ইসরায়েলি পণ্যগুলোর আর্থিক লাভ কমাক – ইসরায়েল সবসময়ই আমেরিকার ফান্ডিং পাবে। কিন্তু মানুষ তেল-আবিব ইউনিভার্সিটিকে বয়কট করতে যতটা আগ্রহী, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিকে বয়কট করতে ততটা আগ্রহী না। তিনি আরও বলেন যে, বিডিএস মুভমেন্ট ইসরায়েলকে একটি অ্যাপার্থেইড রাষ্ট্র হিসাবে দেখাতে চায়, কিন্তু ইসরায়েল আসলে একটা কলোনিয়ালিস্ট রাষ্ট্র। বিডিএস এর এই রিপ্রেজেন্টেশন একটা সময় ব্যাকফায়ার করবে বলে নোম চমস্কির ধারণা। তার মতে এসব পণ্যভিত্তিক বয়কটের চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্যাংকশন বেশি কার্যকর এবং সেটার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তাই বলে এমন না যে ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করা যাবে না। কেননা ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন, তাদের গ্লোবাল সফট পাওয়ার, লবিং – এসব কিছু মানুষের সামনে আনা যায়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে যে কোন পণ্যগুলো বয়কট করতে হবে। BDS এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বেশ কিছু পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে এইচপি, সিমেন্স, এক্সা, পুমা ইত্যাদি অন্যতম।
- এইচপি এর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের উপর জাতিবিদ্বেষী, দখলদারিত্ব এবং বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার ব্যবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এইচপি এর ফিলিস্তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
- সিমেন্সের কারণে ইসরায়েলের পাওয়ার গ্রিড ইউরোপের সাথে সংযুক্ত হতে পারছে যার দরুন ইসরায়েল সরাসরি লাভবান হচ্ছে।
- এছাড়া এক্সা ইসরায়েলী ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করে
- পুমা ইসরায়েল ফুটবল টিমকে স্পন্সর করে।
অন্যান্য পণ্যে যেভাবে ইসরায়েল লাভবান হয়
এসব প্রতিষ্ঠান বাদেও ইসরায়েল ফিলিস্তিনে উৎপাদিত ফলমূলকে অন্যায়ভাবে “Produced in Israel” লেবেল দিয়ে রপ্তানি করে।
ইসরায়েলের পণ্য চিনতে পারার জন্য আমরা তাদের লেবেল দেখতে পারি। এর পাশাপাশি বারকোড দেখেও ইসরায়েলী পণ্য চেনার উপায় রয়েছে। BDS ওয়েবসাইট অনুযায়ী 729 দিয়ে শুরু হওয়া বারকোডগুলো সচরাচর ইসরায়েলী পণ্য হয়ে থাকে বলে বলা হয়েছে। তবে এটা সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো “Made in Israel” লেবেল দেখে পণ্য সনাক্ত করা।
তারকাদের বর্জন
বিডিএস মুভমেন্ট যে শুধু ইসরায়েলী পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, তা কিন্তু না। মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আদলে তারকা-গীতিকার ও বিভিন্ন সেলেব্রিটির আন্তর্জাতিক সংকটের ব্যাপারে মতামত সহজেই জানতে পারে। তাদের মতামতকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি প্রায়শই হয়ে থাকে। সম্প্রতি হামাস ইসরায়েলে আঘাত করলে ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ফেইসবুক সহ আরও বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে সেলেব্রিটিদের এই যুদ্ধ নিয়ে মতামত প্রকাশের ফলে নেটিজেন দের মাঝে অনেক বিতর্ক শুরু হয় এবং অনেক সেলিব্রিটি বয়কটের শিকার হন। যেমন
- জনপ্রিয় অভিনেত্রী গাল গাদোত ইসরায়েল সমর্থন করায় বেশ কিছু বছর ধরে বয়কট ও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। এই বছরও কোনো ব্যতিক্রম না। তাছাড়া তিনি নিজে আইডিএফ-এ মিলিটারি সার্ভিসে ছিলেন বলে সমালোচনার পাল্লা তার দিকেই বেশি।
- কাইলি জেনার ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে প্রো-ইসরায়েল একটি পোস্ট শেয়ার দিলে তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হন এবং এক ঘন্টার মধ্যেই স্টোরি ডিলিট করতে বাধ্য হন।
- একই ভাবে জনপ্রিয় গীতিকার ম্যাডোনা ও সেলিনা গোমেজও সমস্যার সম্মুখীন হন এবং প্রচুর ফলোয়ার হারান। সেলিনা গোমেজের মতামত প্রাকাশ্যে এলে তার ব্র্যান্ড “রেয়ার বিউটি” কে বয়কট করার ডাক পড়ে। যার ফলে সে একটি চাপ অনুভব করেন এবং ইসরায়েল সম্পর্কে তার অবস্থান প্রাকাশ্যে আনা পরবর্তী দিন গুলোতে সীমিত করে ফেলেন। ম্যাডোনার ক্ষেত্রেও একই আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
এসব উদাহরণ থেকে বুঝা যায় মানুষ শুধু পণ্য বর্জন করেই চাপ প্রয়োগ করছে না, বরং সাংস্কৃতিক ভাবে বয়কট করেও চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
বিডিএস মুভমেন্ট কেন যথেষ্ট প্রভাব রাখতে পারছে না
বিডিএস মুভমেন্টের লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের অন্যায়-অবিচার ও ঔপনিবেশিক শাষণের ইতি টানতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা। ইসরায়েল সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জন করে ক্রেতারা সাময়িক অর্থনৈতিক ক্ষতি ঘটাতে পারলেও এর কোনও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ আমরা দেখতে পাই না। আন্দোলনটির উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এটি সংগঠিত না হওয়াতে যথাযথ লক্ষ্যে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। রিয়েলিস্ট বিশ্বে রাজনৈতিক চাপ আন্তর্জাতিকভাবে প্রয়োগ করা প্রকৃত অর্থে খুব একটা সম্ভব না কারণ প্রত্যেকটি দেশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল।
এছাড়াও যতবারই এই অনন্ত সংঘাতের পুনরুত্থান ঘটে,সাময়িকভাবে নাগরিকরা অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারলেও খুব তাড়াতাড়ি জনগণ এই আন্দোলনের গুরুত্ব ভুলে যায়। এমনটা আমরা শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ক্ষেত্রে না, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। যুদ্ধ ছাড়াও বিশ্বে যতবারই পণ্য বর্জনের কথা উঠে এসেছে, সবগুলোই অস্থায়ী ছিল।
এমনটি আমরা দেখতে পাই ২০২১ সালে ফ্রান্সের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন শার্লি এবদো মুসলিমদের নবী মুহাম্মদ (স.) এর অবমাননা করার পর যখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো এই প্রসঙ্গে আরও অপমানজনক মন্তব্য করেন, তখন মুসলিম বিশ্বে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক পড়ে। বাংলাদেশের মানুষও এই ডাকে সাড়া দিয়ে বয়কট পালন করার চেষ্টা করে। কিন্তু ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো বাংলাদেশ সফরে আসলে কোনরকম বাধা মানুষ তাকে দেয়নি, বরং তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে।
পূর্বের গবেষণা থেকেও দেখা যায় ইসরায়েল সমর্থনকারী কোম্পানি বর্জন করা হলেও খুব একটা আর্থিক ক্ষতি কোম্পানিগুলোর হয়নি কারণ শুধু বাংলাদেশের মানুষ না, কোনও দেশেই এই আন্দোলনে কখনও ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করা হয়নি যার কারণে রাজনৈতিকভাবেও এই আন্দোলন ফলপ্রসূ হতে পারেনি। মূলত সামগ্রিকভাবে এই আন্দোলন সফল করতে হলে এবং যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অধীনেই সম্ভব কিন্তু পর্যবেক্ষণমূলক ফলাফল অনুযায়ী সেটার সম্ভাবনাও খুব কম।