in

লেনিন: রুশ বিপ্লবের মূল নায়ক

বক্তব্য প্রদানকালে লেনিন - কুইজার্ডস

১৯৯০ সালের গ্রীষ্মকাল। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন শহর থেকে অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনার খবর ধীরে ধীরে বহির্বিশ্বে প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিদ্রোহের প্রধান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মূর্তিগুলো বিভিন্ন স্থানে উপড়ে ফেলে বিকৃত করা হচ্ছিলো। এখানেই শেষ নয়। ক্ষুব্ধ জনতা লেনিনের একটি মূর্তির বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন করে সেগুলোকে জনসাধারণের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে। এরপর ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে লেনিনগ্রাড শহরটি আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো সেইন্ট পিটার্সবার্গ নামধারণ করে। এর আগে জারদের শাসনামলে এ নামটি প্রচলিত ছিলো।

বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে লেনিনের ভাবমূর্তি পবিত্র বিবেচনা করা হতো। প্রায় সব জায়গায় ছিলো তাঁর প্রতিমূর্তি। ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, পাবলিক চত্বরের বিশাল বিলবোর্ড, হোটেলের প্রবেশপথে, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর – বাদ যায় নি সাধারণ মানুষের চলাচলের কোন জায়গা। লেনিন সম্পর্কে লেখা হয়েছিলো শত শত বই লেখা। শিশুদেরকে তাঁর মতো আচরণের, পড়াশুনা করার, তাঁর মতো করে পোশাক পরার, এমনকি তাঁর মতো করে দাঁত ব্রাশ করার শিক্ষাও দেয়া হতো!

১৯১৭ সাল থেকে ১৯২৪ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লেনিন ছিলেন সোভিয়েত সরকারের অবিসংবাদিত প্রধান। কার্ল মার্ক্সের তত্ত্বকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আনার মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে “মার্ক্সিজম-লেনিনিজম” ব্যবস্থা। এটি একসময় বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবনযাত্রা নির্ধারণ করতো। লেনিনের শত্রুর সংখ্যাও কম ছিলো না। কিন্তু তাঁর শত্রুরাও নির্দ্বিধায় বলতে বাধ্য যে অন্য যেকোন নেতার চেয়ে লেনিনের কার্যকলাপ ও চিন্তা-ভাবনা বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।

লেনিন: জন্ম, শৈশব ও কৈশোর

১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল। ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ জন্ম নেন ভলগা নদীর তীরে ছোট্ট শহর সিমবার্স্কে। লেনিনের আগেই পরিবারে দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলো। তাঁর পরে আরো তিনজন সদস্য যুক্ত হয় পরিবারে। এদের মধ্যে একজন বাদে সকলেই পরবর্তীতে বিদ্রোহী হয়।

চার বছর বয়সে লেনিন - কুইজার্ডস
চার বছর বয়সে লেনিন

লেনিনের বাবা ইলইয়া (Ilya) ছিলেন একজন গরীব দর্জির ছেলে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি একজন শিক্ষক হন। পরে ভলগা নদীর আশেপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে ৪৫০টি সরকারি স্কুলের পরিচালকের দায়িত্ব পান। তৎকালীন রাশিয়ার শাসক জারের (Czar) প্রতি তিনি ভীষণভাবে অনুগত ছিলেন। একই সাথে ছিলেন রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের একজন বিশ্বস্ত অনুসারী। একজন স্কুল কর্মকর্তা হিসেবে ইলইয়ার পেশাগত পদ তাঁকে জাতিগত উচ্চপদমর্যাদার শামিল করলেও আর্থিক দিক থেকে উলিয়ানোভ পরিবার ছিলো মধ্যবিত্ত পর্যায়ের।

লেনিনের মা মারিয়ার পূর্বপুরুষ এসেছিলো জার্মানি থেকে। তিনি ছিলেন একজন ডাক্তারের কন্যা। ইতিহাস, সাহিত্য ও সঙ্গীতে তাঁর ভীষণ আগ্রহ ছিলো। তাছাড়া চারটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি। বিয়ের সময় মারিয়া উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু পরিমাণ সম্পদ নিয়ে এসেছিলেন। রাশিয়ার বড় বড় শহরগুলোর সাংস্কৃতিক ধারা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করায় তাঁর সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষায় গভীর মনোযোগ ও শ্রম দিয়েছিলেন তিনি।

There are decades where nothing happens; and there are weeks where decades happen. – Lenin

বড় হওয়ার সাথে সাথে ভ্লাদিমির তাঁর পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ল্যাটিন ও গ্রীকের দিকে বেশি মনোযোগ থাকলেও একই সাথে বিশ্ব-সাহিত্য, ইতিহাস আর অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে পড়া হচ্ছিলো তাঁর। পাশাপাশি বক্তৃতা ও লেখালেখির দক্ষতা বাড়াতেও সচেষ্ট হয়ে ওঠেন ভ্লাদিমির।

ভ্লাদিমিরের হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের কিছুদিন আগে দুইটি ঘটনা উলিয়ানোভ পরিবারের সুখের জীবনকে বদলে দেয়। প্রথমটি ছিলো বাবা ইলইয়ার মৃত্যু। বাবার মৃত্যুর পর সদ্য কৈশোর পার হওয়া বড় ভাই আলেকজান্ডার পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। এরপর ১৮৮৭ সালে রাশিয়ার রাজধানী শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আসা একটি খবর ভ্লাদিমিরের জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনে। ইউনিভার্সিটি অফ সেইন্ট পিটার্সবার্গের ছাত্র থাকা অবস্থায় আলেকজান্ডার কয়েকজন তরুণ বিদ্রোহীর সাথে মিলে তখনকার জারকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ফলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ পাওয়া মাত্রই মা মারিয়া ছেলেকে রক্ষা করার জন্য রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। জারের কাছে চিঠির পর চিঠি লিখে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তিনি। কিন্তু তাতে জারের মন গলে নি। আলেকজান্ডারকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেও ভ্লাদিমির তাঁর পড়াশুনা চালিয়ে যান। ষোল বছর বয়সে নিজের ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে হাই স্কুল থেকে পাশ করেন তিনি। অসাধারণ ফলাফলের জন্য পান স্বর্ণপদক।

প্রথম দিকে রাজনীতিতে ভ্লাদিমিরের তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। ক্লাসিকস (Classics – Study of ancient Greek and Latin literature, philosophy, and history) ও মানবিক বিষয়ের একজন কলেজ শিক্ষক হবার ইচ্ছা ছিলো তাঁর। কিন্তু প্রাণপ্রিয় বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন লেনিন।

মানবিক বিষয়ে পড়া বাদ দিয়ে ভ্লাদিমির কাজান ইউনিভার্সিটির ল স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিবাদ সভায় উপস্থিতির কারণে মাত্র তিন মাসের মাথায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য জারকে হত্যা করার জন্য লেনিনের বড় ভাইয়ের চেষ্টাও এর জন্য আংশিকভাবে দায়ী ছিলো।

বহু ঝামেলার পর ভ্লাদিমির ইউনিভার্সিটি অফ সেইন্ট পিটার্সবার্গের মাধ্যমে তাঁর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পান। মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি চার বছরের ল প্রোগ্রামের বিষয়বস্তু আয়ত্ত্ব করেন ও পরীক্ষার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে খুব ভালো করেন। ফলে তাকে সম্মান সহ (With honors) ডিগ্রি দেয়া ছাড়া কাজান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্য কোন উপায় ছিলো না।

পোস্টের দ্বিতীয় অংশে রয়েছে নেতা হিসাবে লেনিনের উত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এটি পড়তে চাইলে নিচে ক্লিক করুন।

What do you think?

Written by Tanjim Bin Faruk

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। বর্তমানে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। স্কুল জীবন থেকেই কুইজ করছি। কলেজে নটরডেম ব্লু টিমের হয়ে কুইজ করেছি। কুইজের সাথে জড়িত থেকে জ্ঞানের আলোটাকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিজেকে প্রস্তুত করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হাবল টেলিস্কোপ কুইজ - কুইজার্ডস

হাবল টেলিস্কোপ: মহাকাশ বিষয়ক কুইজ

নিউ হরাইজনস - কুইজার্ডস

নিউ হরাইজনস: প্লুটোকে জানার অভিযান