মহাবিশ্বের কেন্দ্রে রয়েছে পৃথিবী – এক সময় মানুষ এটাই বিশ্বাস করতো। এ ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। পরবর্তীতে গ্যালিলিও গ্যালিলি এর ভালো প্রমাণ দেন। বৃহস্পতি গ্রহের সবচেয়ে বড় চারটি চাঁদ পর্যবেক্ষণ করে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। এ প্রমাণ বদলে দেয় মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের চিন্তাধারা। স্বাভাবিকভাবে সে ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় বৃহস্পতি।
সপ্তম বা অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৃহস্পতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা এ কাজ করেন। সূর্য থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে এর অবস্থান পঞ্চম। কিন্তু আয়তনের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড় গ্রহ।
এবার জেনে নেয়া যাক সৌরজগতের চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে।
বৃহস্পতি কত বড়?
নিরক্ষরেখা বরাবর এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ১৪৩,০০০ কিলোমিটার। আরো সহজ ভাষায় বলা যাক। সৌরজগতের অন্য সব গ্রহকে বৃহস্পতির ভেতর রাখা যাবে। ১,৩০০টির বেশি পৃথিবীর জায়গা হবে এখানে!
কী দিয়ে বৃহস্পতি তৈরি?
বৃহস্পতি একটি গ্যাসীয় গ্রহ। মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে এর বায়ুমণ্ডল গঠিত। দূর থেকে বাদামি, হলুদ, নীলচে সাদা বা গাঢ় লাল রংয়ের যেসব রেখা দেখা যায় গ্রহটির গায়ে, তা আসলে মেঘ। মেঘগুলো ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘন হতে পারে। কিছু গবেষকের মতে এদের ভেতর তরল হীরা-বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল আকারের এক ঝড়। পৃথিবীর চেয়ে তিনগুণ বড় এ ঝড় অনেকটা হারিকেনের মতো। গ্রেট রেড স্পট (Great Red Spot) বলা হয় একে। এর বয়স প্রায় ৩৫০ বছরেরও বেশি!
বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি?
৬৭টি। এর মধ্যে ৫৩টির নাম দেয়া হয়েছে। আবিষ্কৃত বাকি ১৪টি উপগ্রহ এখনো নাম বা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিবিহীন।
সবচেয়ে বড় ৪টি উপগ্রহকে একসাথে গ্যালিলিয়ান স্যাটেলাইট বলা হয়।
- আয়ো (Io): সৌরজগতের সবচেয়ে আগ্নেয়গিরিপ্রবণ জায়গা।
- ইউরোপা (Europa): পৃথিবীর চেয়ে এখানে দ্বিগুণ পানি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
- গ্যানিমেড (Ganymede): সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। বুধ গ্রহের চেয়েও বড় এটি!
- ক্যালিস্টো (Callisto): প্রচুর জ্বালামুখ রয়েছে এ উপগ্রহে।
বৃহস্পতিকে নিয়ে কেমন মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে?
এখন পর্যন্ত নাসার (NASA) আটটি মিশন এ গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে। অবশ্য এদের সবার মূল গন্তব্য বৃহস্পতি ছিলো না।
মহাকাশযান | উল্লেখযোগ্য অর্জন |
---|---|
Pioneer 10 |
|
Pioneer 11 |
|
Voyager 1, Voyager 2 |
|
Ulysses |
|
Galileo |
|
Cassini |
|
New Horizons |
|
২০১১ সালে জুনো (Juno) নামের আরেকটি মহাকাশযান পাঠানো হয় বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে। এর মাধ্যমে সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই এটি বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করে।
একাদশে বৃহস্পতি
১. বৃহস্পতির নাম নেয়া হয়েছে রোমান দেবতা জুপিটারের কাছ থেকে। মিথলজি অনুযায়ী তিনি আকাশের দেবতা। সার্থক নামকরণ বলতে হবে!
২. সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট দিন হয় বৃহস্পতি গ্রহে। মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে পূর্ণ হয় দিনের হিসাব।
৩. বছরের হিসাবে বৃহস্পতি বেশ অলস। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসতে গ্রহটির লেগে যায় প্রায় ১২ বছর।
৪. বৃহস্পতির চারদিকে খুব পাতলা তিনটি বলয় রয়েছে। এর চাঁদগুলোর সাথে ধুমকেতু বা গ্রহাণুর সংঘর্ষ থেকে ছিটকে আসা কণা থেকে বলয়গুলোর সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
৫. বৃহস্পতিতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০০ মাইলেরও বেশি হতে পারে।
৬. বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চেয়ে ১৪ – ২০ গুণ শক্তিশালী।
৭. কোন ঋতু নেই বৃহস্পতিতে।
৮. ভর আরো ৮০ গুণ বেশি হলেই বৃহস্পতি একটি নক্ষত্রে পরিণত হতো।
৯. বৃহস্পতির কেন্দ্রে তাপমাত্রা প্রায় ২৪,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সূর্যের চেয়েও গরম এটি!
১০. রাতের আকাশে দেখতে পাওয়া সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি দ্বিতীয় উজ্জ্বলতম গ্রহ। প্রথম স্থানটি শুক্রের দখলে।
১১. পৃথিবীর অভিকর্ষের তুলনায় বৃহস্পতির অভিকর্ষ ২.৪ গুণ বেশি। অর্থাৎ এর মেঘগুলোর উপর ৫০ কেজি ওজনের কোন ব্যক্তি ভেসে থাকলে তার ওজন হবে ১২০ কেজি।