২০২৪ সাল, এই বছরটা বিগত তিন কিংবা আগামী তিন বছরের মতো নয়। কারণ ২০২৪ সাল একটা অধিবর্ষ, আর অধিবর্ষ মানেই বছরে একটা দিন বেশি পাওয়া। চার বছর পরপর যদি কোনো কিছুর দেখা মিলে, তা নিয়ে তো আগ্রহ-উম্মাদনা থাকবেই।
তাই অধিবর্ষের উৎপত্তি নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
আসলে পৃথিবী যখন সূর্যের চারপাশে একবার প্রদক্ষিণ করে বা সূর্যকে পুরো একবার ঘুরে আসে, ঐ সময়টা হল এক বছরের সমান, বা এক বর্ষ। কিন্তু পৃথিবীর কি সূর্যকে ঘুরে আসতে ঠিক ৩৬৫ দিন বা ৮৭৬০ ঘন্টাই লাগে? এই প্রশ্নের উত্তরটাই আমাদের নিয়ে যাবে অধিবর্ষের উৎপত্তির গল্পে।
পৃথিবীর সূর্যকে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫.২৪২২ দিন বা ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ (মতান্তরে ৪৭) সেকেন্ড। এখন এই ৩৬৫ দিন তো পূর্ণ দিবস, বাকী ভগ্নাংশ সম্বলিত অংশ নিয়েই সমস্যা। কারণ এভাবে যদি প্রতি বছর প্রায় ৬ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় যোগ হতে থাকে, তাহলে তো প্রতি চার বছর পর পর ২৪ ঘন্টা বা পুরো একদিন হারিয়ে যাবে বর্ষপঞ্জির হিসাব থেকে। তাহলে এইটা সমাধান কীভাবে করা যায়?
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকেই বর্ষপঞ্জি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়ে যায়। তখন বিশেষত মিশরীয় সভ্যতার মানুষজন ৩৬৫ দিনে বছর হিসাব করা শুরু করে এবং ভুল এড়াতে চার বছর পর পর একদিন যোগ করে নেওয়া শুরু করে। কিন্তু অন্যান্য সভ্যতার বর্ষপঞ্জি তখনও সঠিক উপায়ে বছর গণনা করা শুরু করেনি, ভগ্নাংশ সম্বলিত সমস্যা রয়েই গিয়েছিল।
রোমান সভ্যতার অন্যতম সম্রাট জুলিয়াস সিজার গণনা সংক্রান্ত এ ঝামেলা এড়াতে নতুন নিয়মের প্রবর্তন করেন। তিনি ঘোষণা করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালটি অন্যান্য সালের চেয়ে আলাদা হবে। ৩৬৫দিনের পরিবর্তে কেবল এই সালটিই ৪৪৫ দিন ব্যাপ্তিকাল পাবে এবং এরপর থেকে ৩৬৫.২৫ দিনে বছর গণনা করা হবে যা সৌরবছর বা ৩৬৫.২৪২২ দিন থেকে সামান্য বড়। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে হিসাবের সুবিধার্থে প্রতি চার বছর পর একদিন বাড়িয়ে নেওয়া হবে, যাকে অধিবর্ষ বলা হবে। আর সেই থেকে এর প্রচলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
আর এভাবেই এসেছে আমাদের এই অধিবর্ষ।
এরপর বছরের পর বছর কেটেছে, আর আমরাও অধিবর্ষ পালন করে আসছি। তারই পরিক্রমায় আজ ২৯শে ফেব্রুয়ারি, চার বছরের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে মিলানো সেই অতিরিক্ত একটি প্রাপ্তি।