করোনাভাইরাস শুধু নতুন একটি রোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়নি, নিয়ে এসেছে একগাদা প্রায় অপরিচিত শব্দও। শব্দগুলোর অর্থও অনেক ক্ষেত্রে বোঝা কঠিন বাংলা ভাষায় উপযুক্ত প্রতিশব্দ না থাকায়। তাই বহু নামজাদা পত্রিকাও হার্ড ইমিউনিটির অনুবাদ করে বসেছে “শক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা”!
কুইজার্ডসের এ লেখাটি থেকে জেনে নিন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ।
Covid-19: কোভিড-১৯
কোভিড-১৯ হচ্ছে এমন সব শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতার সমষ্টি যা সার্স-কোভি-২ ভাইরাসটি তৈরি করতে পারে। কিন্তু সবসময় যে এ জটিলতা বা উপসর্গগুলো দেখা দেবে, ব্যাপারটা এমন নয়।
SARS-CoV-2: সার্স-কোভি-২
সার্স কোভি -২ হলো একটি RNA ভাইরাস যা বর্তমানে সৃষ্ট কোভিড ১৯ কিংবা করোনা মহামারী সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর দেহের চারদিকে গ্লাইকোপ্রোটিনের বিভিন্ন শিক বা স্পাইক থাকায় ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে একে দেখতে একটি রাজমুকুটের মতো লাগে। এজন্যই এর নাম করোনা, যার অর্থ রাজমুকুট দেয়া হয়েছে।
Epidemiology: মহামারী ও রোগবিস্তার-সংক্রান্ত বিদ্যা
এপিডেমিওলজি হলো চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি শাখা যা জনগোষ্ঠীতে রোগের কারণ, প্রকোপ ও বিস্তার নিয়ে গবেষণা করে। এপিডেমিওলজিস্ট হলেন এমন ব্যক্তি যিনি মহামারী বা রোগবিস্তার নিয়ে পড়াশোনা বা গবেষণা করেন।
Quarantine: সঙ্গনিরোধ
করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে এসেছে বা জীবাণু ধরা পড়ার সুযোগ আছে এমন কোন ব্যক্তির রোগের সংক্রমণ হয়েছে কিনা – তা জানার জন্য তাকে বিশেষভাবে আলাদা করে রাখা ও তার চলাচল সীমিত করাকে কোয়ারেন্টাইন/কোয়ারেন্টিন বলা হয়। এ শব্দের উৎপত্তি ইতালীয় শব্দ Quaranta থেকে, যার অর্থ চল্লিশ।
জানা যায়, প্লেগের সময় ইতালির বন্দরে কোন জাহাজ ভিড়লে জাহাজের নাবিক ও নাবিকদের একটি দ্বীপে চল্লিশ দিন আলাদা করে রাখা হতো তাদের মধ্যে প্লেগের মতো কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা নিশ্চিত হবার জন্য। সেখান থেকেই কোয়ারেন্টাইন শব্দটি এসেছে।
Contact Tracing: কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং
কোন রোগে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি সংস্পর্শে আসা অন্যান্য ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং বলা হয়। তাদের (এদেরকে “কন্ট্যাক্ট” বলা হয়) কিছু নির্দিষ্ট দিনের জন্য জনবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় যেন তাদের থেকে আরো মানুষের মধ্যে সে রোগের সংক্রমণ না ঘটে।
Epicenter: কেন্দ্রস্থল
যদি কোন দেশ বা অঞ্চলকে মহামারী রোগের কেন্দ্রস্থল বলা হয়, তার অর্থ সেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিশ্চিত সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। অনেক সময় কেন্দ্রস্থল বা এপিসেন্টারকে হটস্পটও বলা হয়।
বাংলাদেশে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এপিসেন্টার হিসেবে কাজ করেছে। চীনে উহান ছিলো এপিসেন্টার।
Community Transmission: সম্প্রদায়ে বিস্তার বা সঞ্চালন
যখন কোন রোগের সংক্রমণের উৎস অজানা থাকে ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তার বা সঞ্চালন ঘটতে থাকে, তাকে কমিউনিটি স্প্রেড বা সম্প্রদায়ের বিস্তার/সঞ্চালন বলা হয়।
সহজ ভাষায়, একটি মানুষের গোত্র বা এলাকায় যখন এতই বিশাল সংখ্যক মানুষ একটি রোগে আক্রান্ত থাকে যে কার আসলে রোগটি আছে বা নেই সেটি টেস্ট ছাড়া নির্দিষ্ট করে বলা যায় না এবং সম্ভাবনার সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে ঐ জনগোষ্ঠীর যে কেউই আক্রান্ত বলে বিবেচিত হতে পারে – এ অবস্থাকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলে।
Asymptomatic: উপসর্গহীন
অ্যাসিম্পটমেটিক অর্থ “রোগের কোন উপসর্গ বা লক্ষণ না দেখানো।” একজন ব্যক্তির মধ্যে রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা না গেলেও তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
Herd Immunity: গোত্রীয় অনাক্রম্যতা
একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে একদল মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলে ঐ সমাজের বাকি সদস্যদের মধ্যে রোগটির সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। একেই হার্ড ইমিউনিটি বলা হয়।
Flatten the Curve: মহামারী বক্ররেখা সমতল করণ
মহামারীর বিস্তার ধীর করা না গেলে একসাথে বহু রোগী খুব অল্প কিছু দিনে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হবেন। তাতে হাসপাতালগুলো এদের সবাইকে চিকিৎসা দিতে পারবেন না। ফলে স্বাভাবিক সময়ে যে স্ট্রোক বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যেতো, মহামারির সময় তাদেরও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। এতে মহামারি ছাড়াও অন্যসব রোগে ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীও তুলনামূলকভাবে বেশি মারা যাবেন।
ফ্ল্যাটেনিং দি কার্ভের অর্থ হলো একটি মহামারী রোগের বিস্তারকে ধীর করে দেয়া যাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা হুট করে একসাথে বহুসংখ্যক রোগীর চাপে ভেঙে না যায়।
Chloroquine: ক্লোরোকুইন
ক্লোরোকুইন একটি ওষুধ যা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি করোনভাইরাসের সম্ভাব্য ওষুধ হিসাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন অবস্থায় রয়েছে। ক্লোরোকুইনের রাসায়নিক সূত্র C18H26ClN3।
ম্যালারিয়ার রোগের জন্য দায়ী পরজীবী দূরীকরণে ক্লোরোকুইন কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলো। পরবর্তীতে সার্স রোগের চিকিৎসায় কার্যকারিতা দেখানোতে ধারণা করা হচ্ছে এটি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে। এমন ধারণার কারণ হলো, সার্স ও কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস একই গোত্রের।