ইথানল বা অ্যালকোহলযুক্ত বাষ্পের ভাপ নিলে করোনাভাইরাসের জীবাণু মারা যায় – এমন একটি তথ্য পরিবেশিত হয়েছে বাংলাদেশের কিছু সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরনের ভাপ নেয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু কেন? সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।
০১) শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়।
আমাদের রেস্পিরেটরি এপিথেলিয়াম হলো এক ধরনের “Ciliated columnar epithelium”। এর কাজ হচ্ছে লাংগসের উপরিভাগ, মানে ট্রাকিয়া, ল্যারিংস ও ব্রঙ্কাসকে রক্ষা করা।
এজন্য আপনি যখন অ্যালকোহলযুক্ত বাষ্প সেবন করবেন, আমাদের শ্বাসযন্ত্র একে বিষাক্ত পদার্থ হিসাবে দেখবে এবং এর বিপক্ষে ল্যারিংস, ট্রাকিয়া ও ব্রঙ্কাসে প্রদাহ হবে, যা আপনার জন্য ক্ষতিকর। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। কারণ যেসব “inhalation anesthetic” চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে যেগুলো অ্যালকোহল জাতীয়, সেগুলোর একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ।
০২) ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা তৈরি করে।
অ্যালকোহল হচ্ছে একটি চমৎকার ডিসইনফেক্ট, অর্থাৎ কোন ব্যবহার্য বস্তু কিংবা চামড়ার উপরে থাকা জীবাণুকে এটি মেরে ফেলতে পারে শতকরা নিরানব্বই ভাগ পর্যন্ত। সব ধরনের এনভেলাপড ভাইরাসকে (করোনাভাইরাসের ভাইরাস একটি এনভেলাপড ভাইরাস) অ্যালকোহল ধ্বংস করে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মিউকাস মেমব্রেন মানে শ্বাসতন্ত্রের ভেতরের আবরণের গঠনের সাথে ভাইরাসের এনভেলাপেরও গাঠনিক মিল আছে। কারণ ভাইরাস যখন বের হয় তখন ভাইরাস আমাদের কোষের লিপোপ্রোটিন আবরণটি একটা চাদরের মতো জড়িয়ে বের হয়।
তাই অ্যালকোহল চামড়ার কোন ক্ষতি না করলেও এটি শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের আবরণীর কোষগুলোকেও মেরে ফেলবে যা কিনা বিপজ্জনক। কারণ বারবার আবরণীর কোষগুলো নষ্ট হলে তা পুনরায় তৈরি হতে চায়। এভাবে কোষের পুনর্জন্ম হতে থাকে। এক পর্যায়ে কোষের বৃদ্ধির যে স্বাভাবিক নিয়মতন্ত্র তা নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত এ কোষ বিভাজনকে মেডিকেলের ভাষায় ক্যান্সার বলে। তাই শ্বাসের সাথে বার বার ইথানলের মতো বিষাক্ত পদার্থ শ্বাসতন্ত্রের কোষকে বারবার ধ্বংস করে ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে।
০৩) আছে মৃত্যুর সম্ভাবনাও।
অ্যালকোহলযুক্ত বাষ্প সেবনে মস্তিষ্কের স্নায়বিক শ্বসনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারেন।
পাশাপাশি অ্যালকোহল সেবনে হেপাটাইটিস এমনকি লিভার সিরোসিস আর ক্যান্সারও হতে পারে।
০৪) পরীক্ষিত ও প্রমাণিত নয়।
আমরা অনেক সময়ই শুনি “অমুক বিজ্ঞানী অমুক রোগের টিকা আবিষ্কার করে ফেলেছেন” কিংবা “অমুক রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করা হয়েছে গেছে”। কিন্তু দেখা যায়, সেসব টিকা বা চিকিৎসা পদ্ধতির পরে খোঁজ পাওয়া যায় না। কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোন টিকা বা চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের পর এর কার্যকারিতা যাচাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এ কারণে বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য হাত ধোয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কোন অবস্থাতে অ্যালকোহলযুক্ত বাষ্প সেবন করবেন না।