গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়াতে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন ছয়জন!
২০১০ সালে লেবার পার্টির কেভিন রুডকে দলীয় ফোরামে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদটি দখলে নেন তাঁরই রাজনৈতিক সহকর্মী জুলিয়া গিলার্ড। ২০১৩ কেভিন রুড সেই ঘটনার ‘প্রতিশোধ’ নেন এবং দলীয় প্রতিনিধিদের ভোটে পুনরায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
অবশ্য ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টি পরাজয় বরণ করলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান লিবারেল পার্টির টনি অ্যাবট। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় তাঁর নেতৃত্ব তাঁরই রাজনৈতিক সহকর্মী ম্যালকম টার্নবুলের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে দলের অভ্যন্তরীণ ভোটে সরে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। লিবারেল পার্টির পক্ষে ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেন ম্যালকম টার্নবুল, এবং ২০১৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন।
ভাগ্যের পরিহাসে ২০১৮ সালে ম্যালকম টার্নবুলকেও তাঁর পুরনো সহকর্মী টনি অ্যাবটের ভাগ্য বরণ করতে হয়। ২০১৮ সালের ২৪ আগস্ট লিবেরাল পার্টির সংসদীয় প্রতিনিধিরা স্কট মরিসনকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন।
মাত্র দশ বছরে ছয়জন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পেছনে অবশ্য শুধু দলীয় কিংবা জাতীয় রাজনীতি নয়, বরং প্রভাব আছে অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের। অন্তত তিনটি বিষয় অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রকে অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা করেছে।
০১) তিন বছর মেয়াদ
সাধারণভাবে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ চার থেকে পাঁচ বছর হলেও অস্ট্রেলিয়ায় তা মাত্র তিন বছর। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শপথ নেয়ার সময় পর্যন্ত বাদ দিলে মাত্র ৩২ মাস!
তাই বলা হয়ে থাকে, অস্ট্রেলিয়াতে নির্বাচন সবসময় ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। অস্ট্রেলিয়দের মতে এটি সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।
০২) বাধ্যতামূলক ভোট
সাধারণভাবে কোন গণতান্ত্রিক দেশে ভোট দেয়া কিংবা না দেয়াটা জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভর করলেও, অস্ট্রেলিয়াতে ভোটাধিকার প্রাপ্ত সকল নাগরিকের জন্য ভোট দেয়াটা বাধ্যতামূলক। এবং কেউ যদি ভোট না দেয়, তাঁকে ১৫ মার্কিন ডলারের জরিমানা গুনতে হবে!
০৩) লিডারশিপ স্পিল
অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রের একটি আলোচিত এবং একই সাথে সমালোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ‘লিডারশিপ স্পিল’।
এই নিয়মের অধীনে ক্ষমতাসীন বা বিরোধীদলীয় কোন রাজনীতিবিদ চাইলে তাঁর দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন এবং দলীয় প্রধানের পদের জন্য নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে পারেন। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সংসদ নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, লিডারশিপ স্পিল-এ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান পরাজিত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদেও পরিবর্তন আসে।
মূলত এই বিধানটির কারণেই অস্ট্রেলিয়াতে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে প্রতি দুই বছরে একজন করে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিচ্ছেন কিংবা পদ হারাচ্ছেন!